আজও ভালোবাসি
“ইশিতা তোমার চোখ গুলো ভীষণ সুন্দর আর গভীর। যে কেউ ডুবে যাবে তাই এলোয়েজ চশমা পরে থাকবা। আমি চাই না আমি ছাড়া অন্য কেও এই চোখের প্রেমে পড়ুক।”
এটা আকাশের জন্য তেমন বড় ব্যাপার না। কারণ এমন চিজি লাইন সে প্রতিদিনই কাওকে না কাওকে বলে। বলে হয়তো মনেও রাখে না। এ কথাটা আকাশ নিজের অজান্তেই বলেছিলো। আর অবাক করা ব্যাপার এটা আজও কথাটা মনে আছে। নিজের কাছেই অনেকটা অবাক লাগছে তার। না বলে পারতোই বা কিভাবে ইশিতার চোখ আসলেই ভীষণ সুন্দর। চোখের মনি গুলো হাজেল কালারের। চারপাশে সবুজ আর ভিতরটা হাল্কা ব্রাউন থেকে গোল্ড কালার। আসলেই অদ্ভুত। এর উপর সে টানা টানা চোখ। সেদিন কাজল দিয়ে আসায় আকাশ নিজেই বুঝতে পারলো না কখন সে কম্পলিমেন্টটা দিয়ে দিলো।
ইশিতাঃ এমনি। আমার চশমা পরতে ভালো লাগে তাই।
ইশিতা আহানের হাত থেকে চশমাটা নিয়ে পরে ফেললো।
ইশিতাঃ চলেন।
আহানঃ তোমার বেবি কোথায়?
ইশিতাঃ ইশান তো নিশি আর রায়হানের সাথে নিচে গেছে।
আহানঃ ওহ ওকে কাম।
আহান আর ইশিতা চলে গেল।
নিশাঃ ওয়াট হ্যাপেন্ড বেবি, কাম।
আকাশঃ হম চল।
আকাশ আড়চোখে একবার তাকালো। নিশাকে নিয়ে হেঁটে গেলো।
আহান আর ইশিতা লিফট এ উঠলো। হঠাৎ করে লিফট জোরে নরে উঠলো। ইশিতা তাল সামলাতে পারলো না। পরে যেতে নিলেই আহান ইশিতাকে কোমড় জড়িয়ে ধরলো আর ইশিতা লিফট এর পাশের হান্ডেল ধরলো। আহান ইশিতার হ্যান্ডেল ধরাটা খেয়াল করে নি। তাই ওকে ছাড়ে নি। ইশিতা আহানের দিকে তাকাতেই চোখাচোখি হলো। পরের মূহুর্তে আবার চোখ সরিয়ে নিলো।লাইট কিছুক্ষণ অন অফফ হয়ে পুরো অফফ হয়ে গেল। সাথে ইশিতাকে ছেড়ে দিলো। কয়েক সেকেন্ড এ আবার লিফট চালু হলো। সাথে লাইটও আসলো।
আহানঃ আই থিংক কারেন্ট গিয়েছিলো।
ইশিতাঃ হম।
.
.
.
উজানের মেজাজ সাত আসমানে। একতো না চাওয়া সত্ত্বেও জোর করে এখানে নিয়ে এসেছে এর উপর নেটওয়ার্ক এর প্রবলেম এর কারণে ফোনও দিতে পারছে না। নিশ্চয়ই এঞ্জালিনা টেনশন এ আছে।
.
.
.
উজানের মেজাজ সাত আসমানে। একতো না চাওয়া সত্ত্বেও জোর করে এখানে নিয়ে এসেছে এর উপর নেটওয়ার্ক এর প্রবলেম এর কারণে ফোনও দিতে পারছে না। নিশ্চয়ই এঞ্জালিনা টেনশন এ আছে।
প্রাপ্তি চকলেট খেতে খেতে নিচে গেট পেরিয়ে যেতে নিলেই আবার পা পিছিয়ে পিছিয়ে ফেরত আসে। ভ্রু কুঁচকে তাকালো। উজানের পিছনে যেয়ে একটা আঙুল দিয়ে খোঁচা দিলো। উজান পিছনে তাকাতেই “ভাও” করে চিল্লান দিলো। হঠাৎ এমন হওয়ায় উজান কিছুটা লাফিয়ে উঠলো। বুকে হাত দিয়ে দুই তিনটা নিশ্বাস নিলো। নিশ্বাস যেন আটকে গেছিলো। প্রাপ্তি উজানকে এভাবে দেখে জোরে জোরে হাসতে লাগলো। পেটে হাত দিয়ে ঝুঁকে হাসতে হাসতে চকলেট পরে গেল। প্রাপ্তি কান্নার ভঙ্গিতে বললো,
প্রাপ্তিঃ আমার চকলেট।
উজানঃ একদম ঠিক আছে। অন্য কারো জন্য গর্তা করলে নিজেরই ওই গর্তায় পরতে হয়।
প্রাপ্তিঃ আমি আপনার জন্য গর্তা কই করলাম আর পরলাম কখন!
উজানঃ নাথিং।
বলে যেয়ে নিলেই প্রাপ্তি আবার উজানের সামনে এসে দাঁড়ায়।
প্রাপ্তিঃ আপনার জন্য আমার চকলেট পরছে। এখনই আমাকে চকলেট দিন।
উজানঃ আমার জন্য কিভাবে পরলো। তুমি নিজেই তো হাসতে হাসতে ফালিয়ে দিলা।
প্রাপ্তিঃ আপনাকে নিয়ে হাসছিলাম তাই তো পরলো।
উজানঃ তো হাসছিলা কেন তোমার দোষ।
প্রাপ্তিঃ আপনি যেমনে ভয় পেয়ে লাফিয়ে উঠলেন দেখে না হেসে পারলাম না। আমি জানতাম না ছেলেরা এতো ভীতু হয়।
উজানঃ দেখো মেজাজ খারাপ করবা না এলরেডি মেজাজ অনেক খারাপ।
প্রাপ্তিঃ তাই কেন কি হইসে?
উজানঃ নন অফ ইউর বিজনেস।
প্রাপ্তিঃ ডোন্ট টেল মি আপনার গার্লফ্রেন্ড আপনাকে ছেড়ে পালিয়েছে।
প্রাপ্তি নিজে বলে নিজেই হেসে দিলো। উজানের প্রচুর মেজাজ খারাপ হয় গেল। তবুও কোন ভাবে কন্ট্রোল করে বলল,
উজানঃ দেখ আমার এখন কোন সিন ক্রিয়েট করার ইচ্ছা নেই। আমার গার্লফ্রেন্ড এমন না। নেটওয়ার্ক এর প্রবলেম তাই কল দিতে পারছি না। হয়তো টেনশন এ আছে। নাথিং এলস।
প্রাপ্তিঃ বাট আমার ফোনে তো নেটওয়ার্ক আছে।
উজানঃ রিয়ালি! কেন আই বরো ইউর ফোন ফর সাম টাইম।
প্রাপ্তিঃ আমি কেন দিব?
উজানঃ আমাকে হেল্প করতে।
প্রাপ্তিঃ আপনার হেল্প করে আমার কি লাভ?
উজানের মাথাটা ধরে গেল। মনে মনে বলল, “মেয়েটা একটা কথার কয়টা প্যাচ লাগায়। বিরক্তিকর।”
প্রাপ্তিঃ অনেক প্যাচ লাগাই। বিরক্ত লাগলেও শুনতে হবে।
উজানের চোখ মাথায়।
উজানঃ আমার মনের কথা বুঝলা কিভাবে।
প্রাপ্তিঃ মনের টান।
বলে এক চোখ টিপ দিলো। ফিরে চলে যেতে নিলে আবার পিছনে ফিরে তাকিয়ে বলে,
প্রাপ্তিঃ ফোন কি লাগবে না! কথা বলবেন না! পিছনে আসেন ফোন রুমে।
উজান কিছু না বলে মুখে হাসি নিয়ে পিছনে গেল। প্রাপ্তির লাফালাফিটা আর বাঁচালের মতো কথা বলাটা উজানের অনেকটা অসহ্য লাগছে। তাও সহ্য করতে হচ্ছে। কাজ তো তারই।
প্রাপ্তির রুমের সামনে উজান দাঁড়িয়ে আছে। প্রাপ্তি ভিতর থেকে ফোন নিয়ে এনে উজানকে দিলো। উজান খপ করে ফোনটা নিয়েই এঞ্জালিনাকে কল দিলো। ওইপাশ থেকে মিষ্টি কন্ঠে আওয়াজ ভেসে আসলো, “নাম্বারটি ব্যস্ত আছে। দ্যা নাম্বার ইজ বিজি নাও।” মূহুর্তের মাঝে উজানের মুখের হাসি উধাও। আরো ছয়বার কল দিলো। তাও বিজি।
প্রাপ্তিঃ আমি নিচে যাবো ফোনটা দেওয়া যাবে?
উজান না চেতেও ফোনটা দিলো। মুখটা মলিন।প্রাপ্তি ফোনটা নিয়ে অনেকটা সামনে যেয়ে ফিরে তাকিয়ে একটু জোরেই বলল,
প্রাপ্তিঃ বাই দ্যা ওয়ে, নিচে নেটওয়ার্ক এর প্রবলেম। উপরে আছে। চাইলে নিজের ফোন দিয়েও দিতে পারেন।
বলে হিহি করে হেসে পিছনে দুইহাত রেখে নেচে নেচে নিচে লিফট এ উঠে গেলো। উজানের অনেকটা বিরক্ত লাগলো। আজব তো আগেই তো বলতে পারতো। এখানে এনিয়ে এতো রঙঢং করার দরকারটা কি ছিলো। আবার এঞ্জালিনাকে ফোন দিলো এবার বন্ধ।
.
.
.
নিশি ইশানকে কোলে নিয়ে গার্ডেনে ঘুরছিলো। আচমকায় রায়হান নিশির কাছে যেয়ে ওর কোমড়ে চিমটি দিলো। নিশি রাগে রায়হানের দিকে তাকাতেই রায়হান সেল্ফি ক্লিক করলো। নিশি রাগে কটমট করতে করতে বললো,
.
.
.
নিশি ইশানকে কোলে নিয়ে গার্ডেনে ঘুরছিলো। আচমকায় রায়হান নিশির কাছে যেয়ে ওর কোমড়ে চিমটি দিলো। নিশি রাগে রায়হানের দিকে তাকাতেই রায়হান সেল্ফি ক্লিক করলো। নিশি রাগে কটমট করতে করতে বললো,
নিশিঃ এটা কি হলো!
রায়হানঃ কি হবে তুমি এলোয়েজ একটা পিক তুলতে গেলে এক ঘন্টা লাগাও। তাই আজ ভাবলাম কেনডিড পিক তুলি। তোমার রিয়েল পিক আমার বাচ্চা কাচ্চাকে দেখতে হবে না।
নিশিঃ রিয়েল মানে। আমি কি ফেক পিক তুলি নাকি।
রায়হানঃ এক কেজি মেকাপ মেখে এক ঘন্টা নিয়ে পিক তুলো। বেস্টাটা ছাড়া সব ডিলিট করে দেও। তাই আমার বাচ্চাগুলোকে তার মায়ের আসল চেহেরা দেখানোর জন্য তুলে রাখলাম। নাহয় পরে বলবা এখন বুড়ো হয়ে গেছি বলে আগে তো পরীর মতো ছিলাম।
নিশিঃ তুমি…
কিছু বলার আগে ইশিতা আর আহান আসায় চুপ হয়ে গেলো।
ইশিতাঃ কি কথা হচ্ছে?
নিশিঃ কিরে তুই আর আহান একসাথে!
ইশিতাঃ এমনি।
আহানঃ আচ্ছা ওর তো এখন আড়াই তিন বছর কথা বলে না?
ইশিতাঃ বলে বাট খুব কম।
আহানঃ ওহ, আমি শুনি নি।
রায়হানঃ আমিও।
ইশিতাঃ হম সবার সাথে তেমন কথা বলে না।
নিশিঃ আমার আর তিথির সাথে বলছে। যা তার সাথে আবার কথা বলে না স্পেশাল মানুষ ছাড়া।
রায়হানঃ তুমি আমাদের যা তা বলছো।
নিশিঃ জ্বি হ্যাঁ। আরে ইশু তোর হাতে কি হইসে?
ইশিতাঃ কিছু না এমনি।
নিশিঃ কি এমনি রক্ত দেখেছিস! ব্যান্ডিস করতে হবে তো। এখানে ডাক্তার কোথায় পাওয়া যাবে।
ইশিতাঃ ডাক্তার লাগবে না।
নিশিঃ বাট ব্যান্ডিস তো করতে হবে।
রায়হানঃ আমি আর আহান এমনিতেও সি- বিচ এর ওখানে খাবার অর্ডার দিতে যাবো। নাহয় দেরি হয়ে যাবে সব রেডি কিরতে। আসার সময় নিয়ে আসবো।
নিশিঃ এতো দূরে যাওয়ার দরকার কি?
আহানঃ এখানে আশেপাশে তেমন ভালো না খাবার।
নিশিঃ ওহ। আচ্ছা আমিও যাই।
রায়হানঃ তুমি যেয়ে কি করবা।
নিশিঃ লাটিম খেলবো।
রায়হানঃ কী?
নিশিঃ উফফ চলো তো এতো প্রশ্ন কর কেন? ইশু চল।
ইশিতাঃ না রে, ইশানকে নিয়ে একবার যাওয়া আবার আসা ঝামেলা। তোরা যা আমি একবারে যাবো। ইশানকে দেয়।
নিশি ইশানকে ইশিতার কোলে দিয়ে রায়হান আর আহানের সাথে গেল। ইশিতা যেয়ে গার্ডেনের এক বেঞ্চে বসলো। ইশানের হাতে ছোট বল। তা দিয়ে খেলছে।
সামনে একটি ছোট মেয়েকে চকলেট খেতে দেখলো। চারটা আঙুল মুখে ডুকিয়ে মুখটা বাঁকা করে কিছুক্ষণ দেখলো। পরে ইশিতার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে ইশিতার জামা টান দিলো।
ইশানঃ মাম্মা…মাম্মা…
ইশিতাঃ হম বাবা বল কিছু লাগবে? খিদা লেগেছে?
ইশানঃ মাম্মা মাম্মা চতলেত।
ইশিতাঃ আচ্ছা বাবা আমি পরে কিনে দিব কেমন!
ইশানঃ এতন চতলেত।
ইশিতাঃ এখন না বাবা পরে।
ইশানঃ না এতন।
বলে কেঁদে উঠলো। ইশিতা দ্বিধায় পরে গেল। দোকান রাস্তা ওপাড়ে। ইশানকে নিয়ে যেতে কষ্ট হবে। এমনিতেই কাঁদছে। এর উপর রাস্তা গাড়ি ভরা। ইশানকে নিয়ে যেতেও কষ্ট হবে। আর যদি কিছু হয়ে যায়। ইশিতার চোখ পরলো বৃষ্টির উপর। বৃষ্টিকে ডাক দিলো।
বৃষ্টিঃ আপু ডেকেছো?
ইশিতাঃ ইশান না চকলেট খাওয়ার জেদ ধরেছে। বাট দোকান রাস্তার ওপারে। ওকে নিয়ে যাওয়াটা রিক্সি। প্লিজ আমার জন্য ওর একটু খেয়াল রাখবা।
বৃষ্টিঃ ডোন্ট ওয়ারি আপু। তুমি নিশ্চিন্তে যাও আমি ইশানের খেয়াল রাখছি।
ইশিতাঃ থ্যাংকিউ।
ইশিতা চলে গেল।
বৃষ্টিঃ বাবু খেলবা।
ইশান মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বললো।
বৃষ্টি ইশানকে নামিয়ে বল কেচ খেলা শুরু করলো। বৃষ্টি বল দিচ্ছে ইশান তার ছোট ছোট পায়ে টুংটুং করে হেঁটে যেয়ে বল নিয়ে এসে আবার বৃষ্টি কে দিচ্ছে। হঠাৎ ফোন আসায় বৃষ্টি ফোন রিসিভ করলো। কিন্তু কথা শুনা যাচ্ছে না। বৃষ্টি ইশানকে বললো,
বৃষ্টিঃ বাবু তুমি এখানে থেকে খেলো। কোথায় যেয়ো না কেমন। আন্টি এখনই আসছি।
ইশান মুচকি হেসে দুইটা আঙুল মুখে নিয়ে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বললো। বৃষ্টি ফোনে “হ্যালো” বলতে বলতে কিছুটা দূরে চলে গেল। ইশান সেখানেই বল খেলছে। বলটা হাত থেকে পরে গড়িয়ে যেতে লাগলো। ইশানও টুংটুং করে বলের পিছনে দৌড়াতে লাগলো। বল যেয়ে নিশার পায়ের নিচে পরায় সে পরে গেল। নিশা বল হাতে নিতেই ইশান নিশার কাছে এসে মুচকি হাসি দিয়ে হাত পেতে বলটা চাইলো।
আকাশ কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে কয়েকজনের সাথে কথা বলছে। নিশার দিকে তাকিয়ে দেখলো নিশা নিচে পরে আছে। সামনে ইশান তাও একা নিশার হাতে বল। আর ইশান হাত পেতে আছে। হয়তো বল চাচ্ছে। সামনের একজনের ডাকে তার সাথে কিছু কথা বলতে লাগলো।
নিশা বলটা ছুড়ে সুইমিং পুলে ফেলে দিলো। মূহুর্তের মাঝে ইশানের হাসিটা কান্নায় পরিবর্তন হয়ে গেলো। জোরে জোরে কাঁদতে কাঁদতে পুলের কাছে পা বাঁড়ালো বল নেওয়ার জন্য। আকাশ দুই এক মিনিটের মাঝেই আবার তাকালে ইশানকে পুলের দিকে যেতে দেখলো। তার চোখ দুটো বড় বড় হয়ে এলো। হাতের থাকা কাচের গ্লাসটি ফেলে ইশানের কাছে দৌড় দিলো। ইশান পুলের কিছুটা দূরত্বে থাকা অবস্থায়েই আকাশ এসে ইশানকে কোলে তুলে নিলো। জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে লাগলো। নিশ্বাসটা যে এতোক্ষণে বন্ধ হয়ে গেছিলো। ইশানের দিকে তাকালো মুখ ফুলিয়ে কাঁদছে। আকাশ এক হাত দিয়ে ইশানের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে জিজ্ঞাসা করলো,
আকাশঃ ওখানে কেন যাচ্ছিলে!
ইশানঃ বুল।
আকাশ বুঝতে পারলো না। পুলের দিকে তাকিয়ে দেখলো বল। একজন ওয়েটারকে ডাক দিয়ে বললো বল এনে দিতে। বল এনে ইশানের হাতে দিতেই ইশানের মুখ হাসিতে ভরে গেলো। ইশান আকাশের গালে একটা চুমু দিলো। আর কিউট গলায় নিজের গালে হাত রেখে বললো,
ইশানঃ পাপ্পি….পাপ্পি…
আকাশ হাসলো। ইশানের গালে একটা চুমু দিলো। নিজের অজান্তেই চোখ জোড়া ভিজে গেল।
ইশিতা চকলেট কিনে এনে জানতে পারে বৃষ্টি এসে ইশানকে পায় নি। ইশিতার ভয়ে কলিজা কাঁপা শুরু হউএ যায়। ধপ করে নিচে বসে পরে। নিশি, রায়হান আর আহান এসে ইশিতাকে এভাবে দেখে ভয় পেয়ে যায়। বৃষ্টির কাছে সব জানতে পেরে জোরে কষিয়ে একটি ধাপ্পর দেয়। আর বকা ঝকা করে। রায়হান পাশে যেয়ে প্রহরকে ফোন দিতেই দুইজনে নেমে আসে। ইশিতা ভয়ে কান্না শুরু করে দেয়। নিশি ইশিতাকে জড়িয়ে ধরে।
তিথিঃ কি হইসে? ইশানকে এভাবে একা ছেড়ে গেলি কিভাবে! আর আমাদের কাওকে বললেই তো পারতি।
ইশিতা কেঁদেই যাচ্ছে।
প্রহরঃ এখন এসব বাদ দেও। এখন কি করব তাই ভাবো। পুলিশ কম্পিন্ট করবো।
তিথিঃ আগে না হয় হোটেলে খুঁজে নি।
প্রহরঃ খুঁজা লাগবে না।
সবাই অবাক চোখে প্রহরের দিকে তাকালো।
তিথিঃ মানে?
প্রহর ইশারায় আকাশকে দেখালো। সে হেঁটে যাচ্ছিলো ছিলো আর ইশানের সাথে খেলছিলো। ইশিতা উঠে দৌড়ে যেয়ে আকাশের কোল থেকে ইশানকে খপ করে নিয়ে নিলো। সারা মুখে চুমু দিতে লাগলো। ইশানকে বুকে ভরে নিলো। রাগে নাক মুখ ফুলিয়ে জিজ্ঞাসা করলো,
ইশিতাঃ আমার ছেলেকে ধরলেন কিভাবে আপনি? আর ও আপনার কাছে কেন?
আকাশঃ বল নিতে পুলে যাচ্ছিলো ওকে দেখে নিয়েছিলাম নাহয় সর্বনাশ হয়ে যেত।
ইশিতাঃ ধন্যবাদ।
ইশানঃ মাম্মা মাম্মা চতলেত চতলেত।
এক ওয়েটার এসে আকাশের হাতে চকলেট দিয়ে গেল।
আকাশঃ অনেকক্ষণ ধরে চকলেট চাচ্ছিলো তাই ও
আনিয়ে নিয়েছি।
আনিয়ে নিয়েছি।
বলে ইশানের দিকে চকলেট এগিয়ে দিলো। ইশানও হাত বাড়িয়ে নিতে নিলেই ইশিতা ইশানকে সরিয়ে ফেলে।
ইশিতাঃ আমি আমার ছেলের ইচ্ছা নিজে পূরণ করতে পারি। আমার বাচ্চার জীবন বাঁচালেন তার জন্য ধন্যবাদ।
বলে ইশানকে নিয়ে চলে গেলো। সামনে যেতেই আহান ইশিতার আনা চকলেট নিচ থেকে উঠিয়ে এনে ইশানকে দিলো। ইশানও হাসি মুখে চকলেটটা নিলো। আহান হাত দিয়ে আহানকে কাছে ডাকলো। আহান ঝুঁকে ইশানের সামনে আসতেই আহানের গালে চুমু দেয়। আবার নিজের গাল দেখিয়ে বলে,
ইশানঃ পাপ্পি…পাপ্পি…
সবাই হেসে উঠে। আহান ইশানের গালে একটি চুমু দেয়।
নিশা আকাশের পিছে দাঁড়িয়ে বলে,
নিশা আকাশের পিছে দাঁড়িয়ে বলে,
নিশাঃ সরি বেবি আমি জানতাম না তোমার বাচ্চা এতো পছন্দ। বাট আমি ইচ্ছা করে করি নি। আচ্ছা এসব বাদ দেও দেখো কত কিউট ফ্যামিলি। আমাদেরও একসময় এমন ফ্যামিলি হবে তাই না। তুমি আমি আর আমাদের বেবি।
আকাশঃ গেট আউট।
নিশিঃ কি?
আকাশ প্রথমবার মৃদু স্বরে বললেও এবার নিশার দিকে তাকিয়ে জোরে বলে উঠলো,
আকাশঃ আই সেইড গেট আউট। আর কখনও তোমাকে যেন আমার আশেপাশেও না দেখি। গেট লোস্ট ফ্রোম হিয়ার।
নিশার আকাশের চেহেরা দেখে ভয় লাগলো। সেখান থেকে চলে গেলো। আকাশ আবার ফিরে ইশিতা, ইশান আর আহানের দিকে তাকালো।
.
.
.
সারাদিন সবাই মিলে ঘুরাঘুরি করলো আর সূর্যাস্তও একসাথে দেখলো। আর রাতে এসে ঘুমিয়ে পরলো।
.
.
.
সারাদিন সবাই মিলে ঘুরাঘুরি করলো আর সূর্যাস্তও একসাথে দেখলো। আর রাতে এসে ঘুমিয়ে পরলো।
পরেরদিন সকালে তিথি উঠে দেখে প্রহর এলরেডি উঠে গেছে।
তিথিঃ আপনি এতো সকালে।
প্রহরঃ কেন উঠতে পারি না।
তিথিঃ না মানে আপনি তো আটটার আগে উঠেন না তাই আর কি।
প্রহরঃ তোমাকে উঠাতেই নিচ্ছিলাম। তুমি নামাজ পরে রেডি হয়ে আসো আমি তোমার জন্য নিচে অপেক্ষা করছি।
তিথিঃ কোথায় যাবেন?
প্রহরঃ নো প্রশ্ন। আসো।
প্রহর যা বললো তিথি তাই করলো। নিচে এসে গেটে দেখলো প্রহর দাঁড়িয়ে আছে। তিথি প্রহরের কাছে গেলো।
তিথিঃ এসেছি। এখন তো বলেন কোথায় যাবেন?
প্রহরঃ সাগর কন্যায় এসে এখানের সূর্যাদয় দেখবে না।
তিথিঃ ওহ হে কালকের সূর্যাস্ত আমার জীবনের দেখা বেস্ট সূর্যাস্ত ছিলো।
প্রহরঃ আজকের সূর্যাদয় ও বেস্ট হবে।
তিথিঃ আচ্ছা আমি সবাইকে ডেকে আসছি।
তিথি যেতে নিলেই প্রহর তিথির হাত ধরে ফেলে। তিথি পিছনে ফিরে তাকালে প্রহর বলে উঠে,
প্রহরঃ শুধু তুমি আমি অন্য কেও না।
তিথিঃ কিন্তু…
প্রহরঃ চুপচাপ চলো। আর শাল পরে আসো নি না।
তিথিঃ এতো ঠান্ডা না তো।
প্রহরঃ আমি জানতাম তাই বলবা। তাই নিয়ে আসছি। নিজের একটু খেয়াল রাখতে পারো না। আমি না নিয়ে আসলে তো পরে ঠান্ডা লেগে যেতো।
তিথিঃ আমি জানতাম আপনি নিবেন।
বলে মুচকি হাসলো। প্রহর নিজেই শাল খুলে তিথিকে শাল জড়িয়ে দিল। শাল জড়িয়ে সরতে নিতেই তিথির চুলের উপর নজর পরে। হঠাৎ চুলের কাটাক্লিপটা খুলে দেয়। তিথি কিছু বলতে যাবে এর আগেই প্রহর বলে উঠে,
প্রহরঃ চুলটা খোলা রাখো। তোমাকে আরো বেশি সুন্দর লাগে।
তিথি কিছু বললো না। দুইজন এ পাশাপাশি হাঁটতে লাগলো। বাতাসে খোলাচুল গুলো বারবার এসে প্রহরের মুখে লাগছে। যত তার মুখে এসে ছুয়ে যাচ্ছে তার ততই ভালো লাগছে। প্রায় পঁচিশ মিনিট লাগলো সি বিচ এ যেতে।
তিথিঃ দেখেন এ সারি সারি গাছ গুলো কাল সন্ধ্যা থেকেও বেশি সুন্দর লাগছে তাই না।
প্রহরঃ হম।
তিথি আর প্রহর বিচের সামনে দাঁড়িয়ে রইলো। হঠাৎ সাগরের বুক থেকে লাল হলুদ সূর্য উদয় হলো। লে লাল হলুদ কমলা সূর্যের প্রতিচ্ছবিতে নীল রঙের পানিটাও হলুদ কমলা হয়ে এসেছে। সাথে আকাশটাও।
প্রহর তিথির দিকে তাকালো। তিথির মুখে মনমুগ্ধকর সে হাসি। চোখে এক চমক। প্রহর এক’পা এক’পা করে পিছালো। ফোনটা বের করে সেট করলো। তিথিকে ডাকতেই তিথির প্রহরের দিকে মাথা ঘুরাতেই প্রহর ছবি তুলে নিলো।
ছবি দেখে নিজেই অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। ফোনটা আস্তে আস্তে করে নামাতেই ছবি থেকেও সুন্দর এক দৃশ্য দেখতে পেলো। হয়তো তার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য।
চলবে….
Post a Comment
Post a Comment