লুকানো ভালোবাসা

লুকানো ভালোবাসা

তনিমা একটু পানি দাও তো।
আজ বেশ গরম পড়েছে।তারউপর হেটে আসতে আসতে একদম ঘেমে গেছি।রাস্তায় যে জ্যাম,রিক্সায় বসে থাকলে এই টিউশনিটাও মিস হয়ে যেতো।
আমার কথায় তনিমা উঠে দাঁড়ালো। আমি কিছু বলার আগেই তনিমা বললো,
-স্যার আর কিছু লাগবে?
-না আম্মু,শুধু এক গ্লাস ঠান্ডা পানি।
তনিমা আর দাড়ালো না।স্যারের জন্যে পানি আনতে গেলো।
তনিমা।আমার একমাত্র ছাত্রী। অবশ্য ওকে ছাড়াও আরও কয়েকজনকে পড়াই,তবুও কেন যেন ওর প্রতি ভালবাসাটা একটু বেশীই।
পিচ্চি একটা মেয়ে।ক্লাস ফোরে পড়ে।বিশেষ করে ওর কথাগুলা আমার বেশ ভাল লাগে।
আপনি পানি চেয়েছেন?
মিথির কথায় আমি ওর দিকে তাকালাম।মেয়েটার মুখে বেশ রাগি ভাব লেগে আছে।আসলে পানি চাওয়ার সাথে ওনার রাগের সম্পর্ক আমি বুঝলাম।মিথিলা,তনিমার বড় বোন।
আমি কিছু বলার আগেই মিথিলা বেশ জোরে গলায় বললো,
-আমি কি আপনার বউ।ওইটুকু পিচ্চি মেয়েটাকে কি শিখিয়ে দিয়েছেন।
মিথিলার কথায় আমি কি বলবো ভেবে পেলাম না।আসলে বুঝতেই পারছি না কি হচ্ছে।তাছাড়া আমি তো ওর কাছে পানি চাইনি।চাইছি তনিমার কাছে।
এদিকে মেয়েটা যা ইচ্ছে তাই বলে গেলো।
এতটা অপমান কোনদিনও হইনি।তনিমার আম্মু পর্যন্ত এসে জিজ্ঞেস করলো,কি হয়েছে বাবা।কিন্তু আমি উত্তর দিতে পারলাম না। আসলে হয়েছে টা কি সেটাই তো বুঝে উঠতে পারছি না।তনিমা কি কিছু বলেছে।
তনিমা গ্লাস হাতে আমার দিকে আসতেই গ্লাসটা নিয়ে টেবিলে রেখে দিলাম।পানি না খেয়েই মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করলাম,
-তোমার আপুকে কি বলেছো?
তনিমা আমার কথায় ফিক করে হেসে দিয়ে বললো,
-আপুকে বলেছি, তোমার বর পানি চাচ্ছে।
এই পিচ্চি ফাজিল মেয়েটার কথায় আমার রাগটা একটু বেড়েই গেলো।মেয়েটা যে এতটা ফাজিল সেটা আগে বুঝিনি।আমি আর কিছু না বলে না পড়িয়েই বের হয়ে আসলাম।এই অবস্থায় পড়ানোর কোন ইচ্ছেই আমার নেই।তবে যেটা হয়েছে আমার সাথে সেটা ভাল হয়নি।
সোডিয়ামের আলোতে হাটতে ভালই লাগছে।তবে মনটা সেই আগের মতই খারাপ।আসলে এভাবে যে কোনদিন আমার উপর দিয়ে ঝড় বয়ে যাবে বুঝতেই পারিনি।
মিথিলা মেয়েটাকে আমার কাছে বেশ লাগে।মিশুক,সুন্দরী,মনটাও বেশ ভাল।সব মিলিয়ে পারফেক্ট। কিন্তু আজ হঠাৎ এমন করলো কেন।
এইতো কিছুদিন আগেও তো মেয়েটা আমাকে নাস্তা বানিয়ে খাওয়ালো।বেশ কিছুক্ষন গল্পও করলো।ও যে আমাকে পছন্দ করে না,তেমনও না।
তনিমাকে পড়ানোর সময় বিভিন্ন ছুতোয় রুমে এসে আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে চলে যায়।কিন্তু আজ।ভাবতেই কেমন যেন লাগছে।
এই যে মিস্টার।
সিড়ি দিয়ে উপরে উঠতেই কেও একজন পেছন থেকে ডাক দিল।এমনিতেই মন মেজাজ ভাল নেই।এখন আবার কে।ভেবেছিলাম কারও সাথে কোন কথা না,বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে ঘুম দেবো।কিন্তু এখন আবার কে ডাকে।ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও আমি পেছনে ঘুরতেই দেখি ফাইজা দাঁড়িয়ে।
এসময় ফাইজাকে দেখে আমি একটু বিরক্তই হলাম।এই মেয়েটা একবার কথা বলতে শুরু করলে আর কোনদিকে খেয়াল থাকে না।
আমি ফাইজার দিকে তাকিয়ে বললাম,
-কিছু বলবে?
-টিউশনি থেকে আসলে?
-হ্যা।
-কাল কিন্তু কলেজ শেষে তোমার জন্যে অপেক্ষা করবো।আসবে তো?
-দেখা যাক।
কথাটি বলে আর আমি দাড়ালাম না।সিড়ি বেয়ে উপরের দিকে গেলাম।
ফাইজা।আমাদের পাশের বাসায় থাকে।নতুন এসেছে।মেয়েটা দেখতে সুন্দরী হলেও কেমন যেন ওর প্রতি ফিলিংস কাজ করে না।আসলে এত সুন্দরী মেয়ে আমার প্রেমে কিভাবে পড়লো সেটাই বুঝিনা। তবে এত ভালতে আমার চোখ নেই।আমার চোখটা মিথিলার উপরেই আটকে গেছে।
আজ ভার্সিটি শেষে যখন বাসায় আসছিলাম তখনি ফাইজার সাথে দেখা।কলেজ ড্রেসে দাঁড়িয়ে আছে রিক্সার জন্যে।আমাকে দেখেই মেয়েটা একটু জোরেই ডাক দিল।আমি ওর দিকে তাকিয়ে রিক্সাটা থামানোর সাথে সাথেই মেয়েটা একদম রিক্সায় উঠে আমার দিকে চেপে বসলো।আসলে সিটটা একটু চাপা তাই হয়তো এমন মনে হয়েছিল।
আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই মেয়েটা বললো,
-রিক্সা পাচ্ছিলাম না।এখন ভালই হলো।আপনার সাথে যেতে পারবো।
ফাইজার কথায় আমি মুখে হাসি ভাব আনার চেষ্টা করলাম।ইচ্ছে না থাকা সত্বেও মুখে হাসি ভাব রেখেই ওকে নিয়েই যেতে হচ্ছে।তবে ব্যপারটা ছিল একদম মনের বিরুদ্ধে।
রাতে না খেয়েই ঘুমিয়েছিলাম।ঘুমটা ভাঙলোও মিথিলার ফোনে।এই সকাল বেলা মিথিলার ফোন পেয়ে আমি একটুও অবাক হতাম না যদি না কালকের ঘটনাটা ঘটতো।আমি ফোনটা ধরতেই মিথিলা একটু নরম শুরেই বললো,
-একটু দেখা করতে পারবেন?
-কেন,আরও কিছুক্ষন বকবেন নাকি?
-সেটা দেখা করলেই বুঝতে পারবেন।
মিথিলার কথায় আমি সম্মতি জানালাম।ফোনটা কেটে উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে মিথিলার বলা জায়গাটার দিকে রওনা দিলাম।
অবশ্য এর আগে এখানে কখনও আসা হয়নি।আসলে এখানে যারা আসে তারা হয় বউ নিয়ে আসে নয়তো গার্লফ্রেন্ড।আমার যেহেতু এই দুটোর কোনটাই নেই সেহেতু আসাও হয়নি।
আমি আসতেই দেখি মিথিলা এসে হাজির।ছোট্ট একটা বেঞ্চে বাচ্চা মেয়েদের মত গুটিসুটি মেরে বসে আছে।আমি মিথিলার সামনে এসে দাড়াতেই মেয়েটা উঠে দাড়ালো।আমার দিকে ঠিক মতো চোখ তুলে তাকাতেও পারছে না মেয়েটা।হয়তো লজ্জায়।আমি কিছু বলার আগেই মিথিলা বললো,
-সরি।আসলে তনিমার মিথ্যে বলাটা আমি বুঝতে পারিনি।তাছাড়া আমার রাগটা সেখানে ছিল না।
মিথিলার কথায় আমি ওর দিকে আবারও তাকালাম।মেয়েটা ঠিক আগের মতই মাথা নিচু করে আছে।আমি আগেই বুঝেছিলাম যে আমার প্রতি ওর রাগটা পানি চাওয়াতে হয়নি।এতে অন্য কোন ব্যপার আছে।
আমি মিথিলাম দিকে তাকিয়ে বললাম,
-রাগের কারনটা জানতে পারি?
-আসলে কাল বাসায় যাওয়ার সময় আপনার সাথে একটা মেয়েকে দেখেছিলাম, রিক্সায় বসে যাচ্ছেন।
-এতে রাগের কি হলো?
-আপনার পাশে অন্য কোন মেয়েকে আমার সহ্য হয় না।
কথাটি বলে মিথিলা ওর মাথাটা আরও একটু নিচু করলো।তারমানে কালকে ফাইজার সাথে ও আমাকে দেখে ফেলেছিল।আর সেই রাগটাই সন্ধায় আমার উপর খাটিয়েছে।
ফাইজা সম্পর্কে মিথিলাকে সবকিছু বলে ফোনটা বের করে ওর দিকে এগিয়ে দিয়ে বললাম,
-দেখোতো এই মেয়েটাকে সহ্য হয় কিনা।
আমার কথায় মিথিলা আমার দিকে তাকিয়ে ফোনটা হাতে নিল।পিকটা দেখে কি বুঝলো আমি নিজেও বুঝলাম না।মেয়েটা এসে আমার পাশে দাঁড়িয়ে একটা সেলফি তুলে বললো,
-এরকম ঘোলা পিক মানায় না,এখন থেকে এইটা স্ক্রিনে রাখবা।
মিথিলার কথায় আমি মুচকি হেসে বললাম,
-আচ্ছা রাখবো।
-কিন্তু তুমি আমার এই পিক কখন তুলছো?
-অনেক দিন আগেই।আমাকে তখন নাস্তা দিচ্ছিলে।
-লুকিয়ে কারও পিক তোলা ঠিক না।
-এখন তো জানলে।
-হুম।
-ভালবাসো?
আমার কথায় মিথিলা মুচকি হেসে আমার হাতটা শক্ত করে ধরে বললো,
-হুম বাসি,অনেক ভালবাসি।
আমি এবার মিথিলার কানের কাছে মুখ নিয়ে বললাম,
-ওদিকে ফাইজা অপেক্ষা করছে।যেতে হবে।
-কি বললে তুমি।ওই ফাজিল মেয়েটার কাছে যাবে।পা একদম ভেঙে ফেলবো।
পা ভাঙার কথা শুনে আমার মুখটা একটু শুকিয়েই গেলো।কথা শুনেই পা কেমন যেন ব্যথা করছে।
আমি মিথিলাকে আর কিছু না বলে ওর হাতটা শক্ত করেই ধরলাম আর মনে মনে বললাম,ওদিকে আর কোন ভাবেই যাওয়া যাবে না, কোন ভাবেই না,কোন মতেই না।

Post a Comment