অঘ্রান প্রান্তরে _____জীবনানন্দ দাশ

অঘ্রান প্রান্তরে _____জীবনানন্দ দাশ

‘জানি আমি তোমার দু’চোখ আজ
আমাকে খোঁজেনা আর পৃথিবীর’ পরে-
বলে চুপে থামলাম, কেবলি অশত্থ
পাতা পড়ে আছে ঘাসের
ভিতরে শুকনো মিয়োনো ছেঁড়া;- অঘ্রান
এসেছে আজপৃথিবীর বনে;
সে সবের ঢের আগে আমাদের দুজনের মনে হেমন্ত
এসেছে তবু; বললে সে, ‘ঘাসের ওপরে সব
বিছানো পাতার
মুখে এই নিস্তব্ধতা কেমন যে-
সন্ধ্যারআবছা অন্ধকার
ছড়িয়ে পড়েছে জলে; কিছুক্ষণ অঘ্রাণের অস্পষ্ট
জগতে হাঁটলাম, চিল উড়ে চলে গেছে-কুয়াশার প্রান্তরের
পথে
দু-একটা সজারুর আসা-যাওয়া; উচ্ছল
কলারঝড়ে উড়ে চুপে সন্ধ্যার
বাতাসে লক্ষ্মীপেঁচা হিজলের ফাঁক দিয়ে বাবলার
আঁধার গলিতে নেমে আসে;
আমাদের জীবনের অনেক অতীত
ব্যাপ্তি আজো যেন
লেগে আছে বহতা পাখায়
ঐ সব পাখিদের ঐ সব দূর দূর ধানক্ষেতে,
ছাতকুড়োমাখা ক্লান্ত জামের শাখায়;
নীলচে ঘাসের ফুলে ফড়িঙের হৃদয়ের
মতো নীরবতা ছড়িয়ে রয়েছে এই
প্রান্তরে বুকে আজ…… হেঁটে চলি…..
আজ কোনো কথা
নেই আর আমাদের; মাঠের কিনারে ঢের
ঝরা ঝাউফল
পড়ে আছে; খড়কুটো উড়ে এসে লেগে আছে শড়ির
ভিতরে,
সজনে পাতার গুঁড়ি চুলে বেঁধে গিয়ে নড়ে-চড়ে;
পতঙ্গ পালক্ জল-চারি দিকে সূর্যের
উজ্জ্বলতা নাশ;
আলোয়ার মতো ওই
ধানগুলো নড়ে শূন্যে কী রকম অবাধ আকাশ
হয়ে যায়; সময়ও অপার-তাকে প্রেম আশা চেতনার কণা
ধরে আছে বলে সে-ও সনাতন;-কিন্তু এই ব্যর্থ
ধারণা
সরিয়ে মেয়েটি তাঁর আঁচলের
চোরাকাঁটা বেছে প্রান্তর নক্ষত্র নদী আকাশের
থেকে সরে গেছে যেই স্পষ্ট নির্লিপ্তিতে-তাই-ই
ঠিক;- ওখানে সিগ্ধ হয়
সব।
অপ্রেমে বা প্রেমে নয়- নিখিলের বৃক্ষ নিজ
বিকাশে নীরব।

Post a Comment